উদ্বোধনের আগে : বাংলাদেশ গেমসের আনুষ্ঠানিক পর্দা উঠছে আজ। এর আগে গতকাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় মশাল প্রজ্বালন করেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সভাপতি ও সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ (বাঁয়ে)। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে চলছে জাঁকজমক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মহড়া।

সন্ধ্যা নামতেই আলোক-স্নাত বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের অঙ্গে মায়াবী রূপ। মাঠের ভেতর বিশাল মঞ্চে আলোর রোশনাই আর মাইক্রোফোনে বাজছে—‘ক্রীড়াঙ্গনে বঙ্গবন্ধু’। এ যেন বড্ড অচেনা, আশপাশের চিরায়ত জঞ্জাল সরিয়ে হঠাৎ নিজেকে আলাদা করে তুলেছে এই ঐতিহাসিক মনুমেন্ট। নতুন সাজে অপেক্ষা করছে বঙ্গবন্ধু নবম বাংলাদেশ গেমসকে স্বাগত জানাতে। আজ তার শুভ উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ জন্যই আলোর মেলায় কাল রঙিন হয়ে উঠেছিল স্টেডিয়াম। জমে উঠেছিল মাঠের মাঝে বিশাল মঞ্চে শেষ মুহূর্তের রিহার্সাল। তার চূড়ান্ত মঞ্চায়ন হবে আজ। এদিকে গেমস মশালও অনেক কৃতী অ্যাথলেটের হাত ঘুরে বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। ফুটবল-ক্রিকেটের দুই তারকা শেখ মোহাম্মদ আসলাম ও গাজী আশরাফ হোসেন লিপু গতকাল সেই মশাল তুলে দিয়েছেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ও অলিম্পিক মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজার হাতে। সেটি নিয়ে আজ গেমস ভেন্যুতে প্রজ্বালন করবেন অলিম্পিয়ান গলফার সিদ্দিকুর রহমান ও এসএ গেমসের সোনাজয়ী সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা।

এর অনেক আগে থেকেই যে আলোর রোশনাই ছড়াবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সাধারণ দর্শকদের জন্য স্টেডিয়াম উন্মুক্ত হবে বিকেল ৩টায়। দুই ঘণ্টা বাদে অনুষ্ঠান শুরু হবে ক্রীড়াঙ্গনের কীর্তিগাথার গল্প দিয়ে। জাতীয় অর্জনের মুহূর্তগুলো ভেসে উঠবে পর্দায়, সঙ্গে থাকবে ধারাবিবরণী। তবে মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় জাতীয় সংগীত বাজিয়ে এবং তখন থেকেই প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। বিওএ মহাসচিব শাহেদ রেজার স্বাগত বক্তব্যের পর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন বিওএ সভাপতি ও সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। এর পরই ভিডিও টেলিকনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী গেমসের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। ঘোষণার পরই জ্বলে উঠবে গেমস মশাল। গেমস মাসকাট ‘কপোত’ মাঠে প্রবেশ করে তারুণ্যের জয়গানের বার্তা দেবে।

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই যথারীতি শুরু হয়ে গেছে মাঠের খেলা। মেয়েদের ক্রিকেটে ইতিমধ্যে পদকের ফয়সালাও হয়ে গেছে। ফুটবল, ফেন্সিংয়ের পর গতকাল হকিও গড়িয়েছে মাঠে। মোট ৩১টি ডিসিপ্লিনে ৩৭৮টি ইভেন্টে এক হাজার ২৭১টি পদকের লড়াই হবে এই আসরে। সাত বিভাগের সাত জেলার ২৯টি ভেন্যুতে লড়বেন পাঁচ হাজার ৩০০ ক্রীড়াবিদ। তাঁদের সঙ্গে আরো থাকবেন হাজার তিনেক অফিশিয়াল ও গেমস সংশ্লিষ্ট লোকজন। অর্থাৎ প্রায় সাড়ে আট হাজার মানুষ জড়িয়ে আছেন নবম বাংলাদেশ গেমসের সঙ্গে। এই জড়াজড়িতে করোনার ঝুঁকিও থাকবে। ঝুঁকি কমানোর অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত থাকা কঠিন। আসলে শঙ্কার চেয়ে যে জীবনের অগ্রযাত্রা বড় হয়ে উঠেছে। গত এক বছরে করোনার ছোবলে সুর-তাল কেটে যাওয়া ক্রীড়াঙ্গন যেন গতি ফেরাতে চাইছে এই গেমসের মাধ্যমে।

করোনায় স্থবির হওয়ার পর খেলোয়াড়দের দুর্বিষহ জীবন দেখেছে এই ক্রীড়াঙ্গন।  আনন্দের পাশাপাশি খেলাধুলা এখন অনেকের কাছে জীবিকাও। তাই গেমসটা হলে সেই জীবন ও জীবিকার পথে সহায় হয়। সুবাদে  ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো জেগে উঠবে। এই জাগরণে যদি চ্যাম্পিয়ন অ্যাথলেট তৈরি হয়, সেই লক্ষ্যে ছুটছেন আয়োজকরা। তাই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনেক কাট-ছাঁট করে সাত বছর পর গেমসের নবম আসর করতে মরিয়া হয়েছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন। এর পরও আলোর রংমশালে উদ্বোধনীতে তেমন ঘাটতি নেই। রঙের কোনো কমতি নেই। অ্যাথলেটদের পারফরম্যান্সে সেই রঙের ছোঁয়া লাগলে আয়োজন সার্থক হয়।